A small part of life of the rebellious poet Kazi Nazrul Islam.

 কাজী নজরুলের চার পুত্রের নাম ছিল যথাক্রমে কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। আজকের দিনে যদি কোন বাবা তার সন্তানের নাম কৃষ্ণ মুহাম্মদ রাখতেন, তাহলে তার পরিণতি কি হত ভাবতেও ভয় হয়। অথচ অসামান্য অসাম্প্রদায়িক নজরুল আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগেই এই সাহস দেখিয়েছিলেন, ধর্মীয় নামে কুসংস্কার আর অন্ধত্বের বিভেদ দূর করতে অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গেয়ে গেছেন যতক্ষণ পেরেছেন! তার "মানুষ" কবিতায় সেই অসামান্য দৃঢ় উচ্চারণ আজো কিংবদন্তীর মত জাজ্বল্যমান হয়ে আছে মহাকালের বুকেঃ

"...আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা'বলে বন্ধ করনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!'
কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!

হায় রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি'

ও' কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি' মরি'
ও' মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর ক'রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ;
গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।..."

সবার উপরে মানুষকে সত্য প্রচার করায় তাকে তখনো নানা ধরনের নোংরামি আর কুৎসার শিকার হতে হয়েছিল, তবুও কপাল ভালো তিনি এ সময়ে জন্মাননি। তাহলে যে তাকে হয় মরতে হত বা দেশ ছেড়ে পালাতে হত জীবন বাচাতে!

আধুনিক সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য নাকি আস্তে আস্তে আমাদের আরো সভ্য হয়ে ওঠা, মানবিক ও সহনশীল উদার হয়ে ওঠা। কিন্তু আমরা সেগুলোর কোনটা তো হতে পারিইনি, বরং একজন অসাম্প্রদায়িক 'মানুষ' নজরুলের উত্তরসূরী হয়ে সবার উপরে মানুষের বদলে উগ্র ধর্মান্ধতাকে সত্যি মেনে মানুষের উপর চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি করতে করতে সদলবলে এগিয়ে চলেছি এক বর্বর আলকাতরার চেয়েও কালো অন্ধকার সময়ের দিকে!

Comments